ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কথা বলে, এটাই ময়নার অপরাধ

নাজিম মুহাম্মদ, চট্রগ্রাম থেকে ::
বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বিপন্ন প্রাণীর তালিকাভুক্ত পাতি ময়না। তার অপরাধ সে মানুষের কণ্ঠ নকল করে কথা বলে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে পাখিটি বিক্রয়, শিকার, পাচার কিংবা পোষা নিষিদ্ধ। বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাষ। এ চারমাসে পার্বত্যজেলা বান্দরবানের বনাঞ্চল থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচার হচ্ছে হাজারো ময়না। অনলাইনে খাঁচায় বন্দী ময়নার ভিডিও ও ছবি দিয়ে বিক্রি হচ্ছে অনলাইনেও।

গত বুুধবার কাপ্তাই নতুন বাজারে বিক্রি করার সময় দুটি ময়না উদ্ধার করে কাপ্তাই রেঞ্জ কর্মকর্তা খন্দকার মাহামুদুল হক। পাখি দুটি কাপ্তাই ন্যাশনার পার্কে অবমুক্ত করা হয়।

বান্দরবান শহরের বাজার মসজিদের পাশে পশু পাখি বিক্রির দোকান রয়েছে অনুপম বড়ুয়ার। বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস। এ চারমাসে অন্তত কয়েক হাজার ময়না পাতি ময়না বিক্রি করে অনুপম। চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করে অনুপম। ময়না কেনার কথা বলে গতকাল বুধবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অনুপম জানান, ১৫ বছর ধরে ময়না বিক্রি করি। যতগুলো চাইবেন ময়না দেয়া যাবে। প্রতিটি ৪২০০ থেকে ৪৮০০ টাকা দাম পড়বে। বেশি ময়না নিতে চাইলে অগ্রিম টাকা দিতে হবে।

ঢাকায় ময়না পাঠানো যাবে কি না জানতে চাইলে, স্বাভাবিকভাবে কণ্ঠে অনুপম বলেন, ঢাকা কেন দেশের যে কোন স্থানে ময়না পাঠানো যাবে। বললেন, ঢাকায় এক থেকে পাঁচটি ময়না পাঠাতে এক হাজার টাকা খরচ পড়বে। বান্দরবান থেকে ঢাকাগামী বাসে ময়না তুলে দেয়া হবে। বাস নম্বর ও ময়নার ছবি ইমোতে (ম্যাসেঞ্জারে) পাঠিয়ে দেব। আপনি ঢাকায় বুঝে নেবেন।

ময়নার বয়স প্রসঙ্গ জানতে চাইলে অনুপম বলেন, বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত ময়নার মৌসুম। এ সময় ময়নার প্রজননের সময়। বান্দরবান শহরের আশেপাশে ময়না মিলে না। রুমা কিংবা থানচির গহীন পাহাড়ে এখনো ময়না পাওয়া যায়। উপজাতি কিছু ছেলে রয়েছে যারা আমাকে ময়না সরবরাহ করে। তাদেরকে অগ্রিম টাকা দিতে হয়ে। এ সময়ের ময়নাগুলো সাধারণত দুই থেকে তিনমাস বয়সী।

ঢাকায় ময়না পাঠাতে পথে কোন সমস্যা হবে কি না জানতে চাইলে অনুপম বলেন, পনেরো বছরের অধিক সময় ধরে ময়না বিক্রি করছি। কখনো কোন সমস্যা হয়নি।

জানতে চাইলে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় প্রধান রফিকুল ইসলাম জানান, পাতি ময়না বিপন্ন প্রাণীর তালিকাভুক্ত। ময়না কেউ বিক্রি করছে খবর পেলে আমরা অবশ্যই অভিযান চালাবো। বান্দরবানে ময়না বিক্রির বিষয়টি আমার জানা নেই, খবর নিয়ে দেখব।

পাতি ময়না:
পাতি ময়না মাঝারি কালো রঙের পাখি। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৯ সে. মি.। ডানা ১৭ সে.মি. ঠোঁট ৩ সে.মি. পা তিন দশমিক ৫ সে.মি. লেজ ৮ সে.মি. ও ওজন ২১০ গ্রাম। ভাত শালিকের তুলনায় এটি আকারে একটু বড়। সাধারণ অবস্থায় প্রাপ্ত বয়স্ক ময়না পাখিকে পুরোপুরি চকচকে ঘোর কৃষ্ণবর্ণ দেখায়। প্রজননের সময় মাথা আর ঘাড়ে হালকা বেগুনী আভা দেখা যায়। ওড়ার সময় ডানার সাদা পট্টি স্পষ্ট দেখা যায়, এমনিতে বসে থাকলে ডানা দিয়ে তা ঢাকা থাকে। চোখ কালচে বাদামী। ঠোঁট শক্ত ও হলুদ, ঠোঁটের আগা কমলা রঙের। পা ও পায়ের পাতা হলুদ। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারা একই রকম।

আমাদের দেশে সাধারণত তিন ধরনের ময়না পাখি দেখা যায়। বান্দরবান, সিলেট ও ময়মনসিংহে। এরমধ্যে বান্দরবান বনাঞ্চলের ময়না বেশি সবচেয়ে সুন্দর ও পরিষ্কারভাবে মানুষের কণ্ঠ নকল করে কথা বলতে পারে। পাহাড়ি ময়না ছাড়াও এক ময়না, পাতি ময়না বা সোনাকানি ময়না বলা হয়। এর ইংরেজি নাম (কমন হিল ময়না) এবং বৈজ্ঞানিক নাম (Gracula Religiosa) এরা জোড়া বাঁধে সারাজীবনের জন্য। কখনো মাটিতে নামে না।

 

পাঠকের মতামত: